বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২৬ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
টেকনাফ ছাড়াও এবার নতুন করে উখিয়া-নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে ভেসে আসছে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ চকরিয়ায় জেলা পরিষদের জমিতে নির্মিত আওয়ামী লীগের অফিস উচ্ছেদ সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটন নিয়ন্ত্রণ ও জাহাজ ছাড়ার পয়েন্ট নির্ধারণ সংক্রান্ত কমিটি গঠণ সব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে কক্সবাজার শহরে এসে সেন্টমার্টিন দ্বীপবাসির সড়ক অবরোধ পাহাড়ী আস্তানা থেকে মালয়েশিয়া পাচারকালে শিশুসহ ৩১ জন উদ্ধার, দুই দালাল আটক সাবের মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর পিএস ফিরোজ কক্সবাজারে গ্রেপ্তার মিয়ানমারের বাঘগুনা খালের পাশে রয়েছে নিমার্ণ সামগ্রী ও দুইটি ট্রলার, মাঝি-মাল্লা সহ ১১ জনের হদিস নেই মিয়ানমারের উপজাতি সম্প্রদায়ের ৬৫ নাগরিকের অনুপ্রবেশ চকরিয়ায় কিশোরকে ছুরিকাঘাত : আটক ৪ চকরিয়ায় ফেরিওয়ালার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

পেঁচারদ্বীপে খাল ও প্যারাবন দখল করে রিসোর্ট নির্মাণ

নিজস্ব প্রতিবেদক : কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ সড়কের রামু উপজেলার খুনিয়াপালংয়ের পেঁচারদ্বীপে প্যারাবন ও ভরাট খাল দখল করে রিসোর্ট নির্মাণ করছে মারমেইড কর্তৃপক্ষ।

সাগর পাড়ের সরকারী ১ নম্বর খাস খতিয়ানের ৫০০ নম্বর দাগের বিশাল এলাকা দখল করে নানাভাবে স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। স্কেভেটর দিয়ে মাটি কেটে প্যারাবনের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করা হচ্ছে। নির্বিচারে কাটা হয়েছে প্যারাবনের বাইন, কেওড়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির ছোট-বড় হাজার হাজার গাছ। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হচ্ছে প্যারাবনের জীববৈচিত্র্যসহ পাখির আবাসস্থল। ইতিমধ্যে প্যারাবন দখল করে দেয়া হয়েছে সীমানা পিলার ও ঘেরা। নির্মাণ করা হয়েছে ৫ শত ফুটের বিশাল লম্বা কাঠের সাঁকো। এভাবে একরের পর একর প্যারাবন জবরদখল ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হচ্ছে।

স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালীর সহযোগিতায় মারমেইড কর্তৃপক্ষ সাগরপাড়ের সরকারী জমি জবরদখল করলেও প্রশাসন নিরব ভূমিকায় রয়েছে। পরিবেশ ও প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকায় এসব জীববৈচিত্র্য বিধ্বংসী কর্মকান্ড চালানো হলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এ অবস্থায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা সহ পরিবেশবাদীরা।

স্থানীয় এলাকাবাসী জানিয়েছেন, মেরিন ড্রাইভ সড়কের পশ্চিমে পেঁচারদ্বীপের আবাহানা ও জাদুঘর এলাকার পশ্চিম পাশে ছিল বিশাল চর ও রেজু নদীর অংশ। কালের পরিক্রমায় রেজু নদীর এ অংশ আস্তে আস্তে ভরাট খালে পরিনত হয়। এ খাল থেকে এক সময় স্থানীয়রা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতো। এই চর ও ভরাখালে প্রায় ২০ বছর পূর্বে প্যারাবন সৃজন করেছিল বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা নেকম। পাশাপাশি প্রাকৃতিকভাবেও প্যারাবন সৃজন হয়। ওই এলাকায় ঘন প্যারাবন, খালের জোয়ার-ভাটা, জীববৈচিত্র্য ও পাখির আবাসস্থলে পরিণত হয়েছিল। জায়গাটি সরকারি ১ নম্বর খাস খতিয়ানভূক্ত খাল ও চর শ্রেণীর। এর পশ্চিম পাশে রয়েছে ঝাউবন। কিন্তু এখন ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি দাবী করে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হচ্ছে। স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির সহযোগিতায় প্যারাবন কেটে জবরদখল শুরু করে মারমেইড এর মালিক সোহাগ ও তার ভাই শাহিন। প্যারাবনের গাছ ও ঝাউগাছ কেটে তারা বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করছে বলেও জানান স্থানীয়রা।

মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মেরিন ড্রাইভ সড়কের পশ্চিম পাশে পেঁচারদ্বীপের আবাহানা এলাকায় ক্যাম্প-ইন কক্স নামের রয়েছে মারমেইড কর্তৃপক্ষের রিসোর্ট। এর পশ্চিমে বিশাল চর, প্যারাবন ও ভরাট খাল। যেখানে প্রতিদিনই আসে জোয়ারের পানি। এ বিশাল চর ও খালে নির্মাণ করা হয়েছে প্রায় ৫০০ ফুট লম্বা কাঠের সাঁকো। স্কেভেটর দিয়ে কাটা হচ্ছে মাটি। নির্মাণ করা হচ্ছে বিভিন্ন স্থাপনা। কাটা হচ্ছে প্যারাবন ও ঝাউগাছ। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে গাছের ঢালপালা। প্যারাবনের গাছ ও ঝাউগাছ দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে কটেজ। প্যারাবনের মধ্যে নির্মাণ করা হয়েছে রেস্টুরেন্ট। এভাবে প্যারাবনে ধংসযজ্ঞ চালানো হচ্ছে। এতে এলাকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মারমেইড এর জমি দেখাশুনার দ্বায়িত্বে থাকা সৈয়দ আলম সুলতান বলেন, জমিটি খাস খতিয়ানের ঠিকই। কিন্তু আরএস ৬৫ ও ৪৩ খতিয়ানের ২ একর ২৪ শতক জমির নথিমূলে মালিক মরহুম গোলাম বারীর ৫ পুত্র ও ৩ কন্যা বিএস সংশোধনে ২৪১ নম্বর মামলা দায়ের করে ডিক্রি প্রাপ্ত হন। তাদের কাছ থেকে মারমেইড কর্তৃপক্ষ রেজিষ্ট্রি বায়না করে কাজ করছে।

তবে রামু উপজেলার খুনিয়াপালং ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (তহশিলদার) মো: সেলিম জানান, এ জমি সম্পূর্ণ খাস খতিয়ানভূক্ত। এক নম্বর খাস খতিয়ানের ৫০০ দাগের সরকারী এ জমিতে তারা অবৈধভাবে জবরদখল ও স্থাপনা নির্মাণ করছে। এমনকি স্কেভেটর দিয়ে মাটি কাটার কথা শুনে সরেজমিন পরিদর্শন করে এ সবের সত্যতা পেয়েছেন। তাদের কাজ বন্ধ রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন।

কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু জানান, দিন দুপুরে যেভাবে প্যারাবন, খাল ও সাগরপাড় দখল, হাজার হাজার গাছ নিধন করে ধংসযজ্ঞ চালানো হচ্ছে সেটি উদ্বেগজনক। পরিবেশ ও প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকায় এসব জীববৈচিত্র্য বিধ্বংসী কর্মকান্ড চালানো হলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তা আরও উদ্বেগজনক।

এসব পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকান্ড বন্ধ করে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রæত আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানান পরিবেশবাদী এ নেতা।

স্থানীয় পরিবেশবিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘এনভায়রনমেন্ট পিপল’র নির্বাহী রাশেদুল মজিদ জানান, ‘জমি ব্যক্তি মালিকাধীন হলেও প্যারাবন ধ্বংস করে জীববৈচিত্র্য ও পাখির আবাসস্থল ধ্বংস করা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। তাও আবার কক্সবাজারের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র হিমছড়ি-প্যাঁচার দ্বীপ সংলগ্ন এলাকার সাগরতীরের গাছগাছালি উজাড় করা মানেই প্রাকৃতিক বিপর্যয় ডেকে আনার মতো ঘটনা।

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম সোহেল বলেন, যেখানে দখল ও স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে সেখানে ছোটকাল থেকে দেখে আসছি জোয়ার-ভাটা খাল, প্যারাবন, বিশাল চর ও ঝাউবন। সরকারী খাস খতিয়ান বলে জানা রয়েছে। বছরের পর বছর নানা কৌশলে দখল করা হচ্ছে। বিশাল কাঠের সাঁকো তৈরী করা হয়েছে। সেখানে এখন অনেক স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। স্থানীয় তহসিলদার ও উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা এসে বারংবার বারণ করা হলেও স্থাপনা নির্মাণ ও জবরদখল বন্ধ হয়নি।

বিষয়টি নিয়ে মারমেইড এর মালিক সোহাগ ও তার ভাই শাহিনের সাথে যোগাযোগ করা চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি। জমি দেখাশুনার দ্বায়িত্বরত সৈয়দ আলম সুলতান জানান, তারা দেশের বাইরে রয়েছেন।

প্যারাবন কেটে স্থাপনা নিমার্ণের সত্যতা স্বীকার করেছেন রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিরূপম মজুমদার।

তিনি জানান, বিষয়টি জানার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে নতুন করে কাজ না করার জন্য বলা হয়েছে। নতুন করে কাজ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নতুন করে কাজ চালানো হচ্ছে বলে অবহিত করা হলে তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে অভিযানিক দল পাঠানো হচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

.coxsbazartimes.com

Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themesbcox1716222888